
প্রকাশিত: Sun, Jun 30, 2024 2:59 PM
আপডেট: Fri, May 16, 2025 1:11 AM
স্ত্রী-সন্তানের প্রতি অভিমানে এনবিআর মতিউরও কি সংসারবিরাগী হয়ে যাবেন!
রহমান বর্ণিল : নিজামুদ্দিন আউলিয়া ছিলেন ভারতবর্ষের কুখ্যাত ডাকাত। একদিন ডাকাতি করে ফেরার পথে গহীন বনের ভেতর ডাকাত নিজামুদ্দিনের সাথে দেখা এক দরবেশের। দরবেশ নিজামুদ্দিনকে বললেন, ‘এই যে তুমি অন্যের মাথায় মেরে সম্পদ উপার্জন কর, এই সম্পদ দিয়ে তুমি কী কর?’ নিজামুদ্দিন বললেন, ‘এসব আমি আমার স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করি।’ দরবেশ বললেন, ‘তুমি যে তোমার পরিবারের ব্যয় বহন করার জন্য মানুষের সম্পদ লুট কর, এতে করে তোমার যে পাপ হয়, তার দায় কি তোমার স্ত্রী-সন্তান, পরিবার পরিজন নেবে?’ নিজামুদ্দিন বললেন, ‘অবশ্যই নিবে। কারণ আমি তাদের জন্যই তো ডাকাতি করি।’ দরবেশ তখন বললেন, ‘তাহলে তুমি তোমার পরিবারের কাছে যাও। গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস কর। তারা কী উত্তর দেয় আমাকে এসে বলবে।’
যথারীতি নিজামুদ্দিন বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন, ‘আমি যে ডাকাতি করে এনে তোমাদের ভরণপোষণ করি এই ডাকাতির পাপের ভাগ তুমি নিবে তো?’ স্ত্রী উত্তর দিলো, ‘আমি তোমার স্ত্রী। আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব তোমার। তুমি কোত্থেকে রোজগার করে আনছ, সেটা দেখার বিষয় আমার না। সুতরাং তুমি যদি পাপ পথে রোজগার কর, সেটার দায়ও একান্তই তোমার।’ নিজামুদ্দিন গেলো বাবা-মার কাছে। তারা বললেন, ‘আমরা যৌবনে বুকের রক্ত পানি করা পরিশ্রম করে তোমাকে বড় করেছি। এখন আমরা বৃদ্ধ হয়েছি। এখন আমাদের দায়িত্ব তোমার। দায়িত্ব পালনে যদি কোনো পাপ তুমি কর, তার দায়ও তোমার। সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না।’
এবার নিজামুদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন তার সন্তানদের। সন্তানরা উত্তর দিলো, ‘তুমি আমাদের জন্ম দিয়েছ। উপার্জনক্ষম হওয়া পর্যন্ত আমাদের লালনপালনের দায়িত্ব তোমার। এই দায়িত্ব পালন করতে তুমি পাপের পথ বেছে নিলে তার দায় আমরা কেন নিবো!’ সবার উত্তর শুনে নিজামুদ্দিনের খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। ভগ্নহৃদয়ে নিজামুদ্দিন গেলো সেই দরবেশের কাছে। তারপর অভিমানে জগৎ-সংসারের প্রতি মোহভঙ্গ নিজামুদ্দিন সংসারবিরাগী হয়ে দরবেশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলো এবং ভয়ংকর নিজামুদ্দিন ডাকাত ধীরে ধীরে বনে গেলো ভারতবর্ষের বিখ্যাত নিজামুদ্দিন আউলিয়ায়।
ছাগলকাণ্ডে মতিউরের কানাডাপ্রবাসী কন্যা ঈপ্সিতার একটা অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। শুনলাম মতিউর কন্যা বলছে, ‘এই লোক আমাদের মানসম্মান সব শেষ করে দিয়েছে। আমি যদি তার এসব অপকর্মের আরো প্রমাণ পাই, আল্লাহর কসম তারে আমি ছাড়ুম না।’ পিতা মতিউরের অবৈধপথে উপার্জনের কাড়িকাড়ি টাকা দিয়েই কন্যা ঈপ্সিতা কানাডায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। ঈপ্সিতা অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি দামের গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ছবি ফেসবুকে আপলোড দিতো নিয়মিত। সেই মেয়ে আজ পিতার অপকর্মের দায় তো নিচ্ছেই না, উল্টো নিজেই বাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য ডাকাতি করা নিজামুদ্দিন যখন জানলেন, স্ত্রী-সন্তান তার পাপের দায় নিবে না, তখন নিজামুদ্দিন ডাকাত সব পাপকাজ ছেড়ে ডাকাত থেকে হয়ে গেলো আউলিয়া। মেয়ে ঈপ্সিতার ভয়েস রেকর্ড শোনার পর মতিউরও হয়তো এরকম কোনো ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলতে পারে। কী জানি লাখ টাকার ছাগল কেবল কোটি টাকার বাগানই খায়নি, এমনও তো হতে পারে যে স্ত্রী-সন্তানের জন্য মতিউর ডাকাতের মতো দু’হাতে রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট করেছে, সেই স্ত্রী-সন্তান আজ তার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করার অভিমানে এনবিআর মতিউরও সংসারবিরাগী হয়ে সহসা বনে যাবে মতিউর রহমান আউলিয়ায়। তারপর মতিউরের নামে মাজার হবে, বছর বছর সেই মাজারে ওরস হবে, আজ থেকে শত শত বছর পরও মতিউরের মাজারের সেই ওরসে এবং বাংলার পথেপ্রান্তরে ভক্তরা তার নামে ভক্তিমূলক গান গাইবেÑ রাস্তা থামায়ে দিলো/রাস্তা থামায়ে দিলো/কাফেলা/এলো বাংলাতে মতিউর রহমান আউলিয়া.../ধন্য ধন্য মেরা/ধন্য ধন্য মেরা/সিলসিলা/এলো বাংলাতে মতিউর রহমান আউলিয়া...! লেখক: কথাসাহিত্যিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
